ব্লগে আমি আমার সাধ্যমতে সবকিছু ভাল করে লিখব। ব্লগের পোষ্টগুলো ভাল লাগলে নিয়মিত BROWSE করবেন আর এটাই হবে আসার প্রপ্তি
শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২
শুধুই তুমি
রোজ দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটি। জানালার একপাশে আলতো মাথা ছুঁইয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন। পিদিম কখনও চোখের পলক ফেলতে দেখেনি ওকে। ড্রাইভার রাজা মিয়া এতদিনে বুঝে গেছে মেয়েটিকে পিদিমের মনে ধরেছে। জানালার ধারে গাড়ি আসামাত্র ব্রেক কষায়। গাড়ি থামানোর শব্দ পেয়ে মেয়েটিও মুচকি হাসে। পিদিমের বুকটা ভরে গেলেও একটা দীর্ঘশ্বাস বেরোয় সেখান থেকে।
বুঝতে পারে মেয়েটি তাকে অপছন্দ করেনা। অপছন্দ করলে এভাবে হাসতো না কিংবা রোজ জানালার ধারে দাঁড়াতো না। কিন্তু পিদিম কখনও আগ বাড়িয়ে কারও ভালবাসা গ্রহণ করবে না। মেয়েটি যদি কোনদিন মিষ্টি হেসে, লাজুক চোখে জানালার গন্ডি পেরিয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে ভিন্ন কথা।
প্রমি রূপকথার রাজকন্যার মত সুন্দর হাসি যার। রোজ সকালে গোসল সেরে জানালার ধারে এসে দাঁড়ায়। বিশুদ্ধ হাওয়া বুক ভরে নিতে ইচ্ছে করে ওর। অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে ব্যাপারটা। আজকাল একটা বিষয় খেয়াল করছে প্রমি । নির্দিষ্ট একটা সময়ে প্রতিদিন একটা গাড়ি তাদের জানালার ধারে এসে থামছে। কল্পনায় গাড়িতে বসা সুন্দর মনের ভদ্রোচিত কোন তরুণের ছবি আঁকে সে। ভাবে হয়তো তরুণটি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আহা বেচারা বড্ডো ভুল করছে। ছেলেটির বোকামী দেখে মুচকি হাসে প্রমি। কেন যেন গাড়ি থামার শব্দ শুনলেই হাসি পায় তার। দৃষ্টিহীনদের অর্ন্তদৃষ্টি নাকি প্রখর হয়। প্রচন্ড কষ্টে হাসে প্রমি। ছেলেটি কি জানে সে অন্ধ?
অন্য দশটা মেয়ের মত প্রমি দৃষ্টিহীন চোখে রঙিন স্বপ্ন বোনে। কিন্তু তার মত অসহায় মেয়ের দিকে কে দুহাত বাড়িয়ে দেবে? হয়তো একদিন তার স্বপ্ন সত্যি হবে, হয়তো গাড়িতে বসা ছেলেটিই একদিন ভীরু ভীরু পায়ে তার কাছে এগিয়ে আসবে। প্রমির হাত দুটো তার নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলবে, তুমি শুধু আমার। প্রমি সেদিন তাকে ফেরাবে না। কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। নিজে যেচে কারও দিকে হাত বাড়াবে না। হতে পারে তার সে যোগ্যতা বিধাতা কেড়ে নিয়েছে। যদি কেউ তার অসহায়ত্বের কথা জেনে তাকে আপন করে পেতে চায় তাহলেই প্রমি তার হবে।
ড্রাইভার রাজা মিয়া ছাড়া পিদিম বলতে গেলে অচল। সব থেকেও যেন তার কিছু নেই। জানালার ধারে দাঁড়ানো মেয়েটির কথা ভেবে আজকাল বুকের বাম পাশটায় কষ্টটা আরও বেড়ে গেছে। ওকে দেখার পর থেকে নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। কোন মেয়ে জেনে শুনে তার মত ছেলেকে হয়তো ভালবাসার আঁচলে জড়াবে না। প্রত্যেক মেয়ের নতুন জীবনে বাড়তি একটা স্বপ্ন থাকে। কিন্তু পিদিম সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না। কারণ, পঙ্গুত্বের অভিশাপে সে অভিশপ্ত। আজ কতদিন হয়ে গেল খোলা আকাশের নিচে মুক্ত মাঠে ছোটাছুটি করতে পারে না সে। বিশ্ব বিধাতা তাকে ড্রাইভার রাজা মিয়ার উপর ন্যস্ত করেছেন।
রোজকার মত জানালার ধারে আজও দাঁড়িয়ে আছে প্রমি। কিছুক্ষণ পর পিদিমের গাড়িও এসে থামে। গাড়ি থামার শব্দ পেয়ে প্রচন্ড কষ্টে প্রমি হেসে মুখ নিচু করে আর পিদিমের বুক চিঁড়ে বের হয় হাহাকার করা একটা দীর্ঘশ্বাস।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন